বাংলাদেশের জিআই পণ্য (বিস্তারিত ও আপডেট)

Spread the love

মোঃ দেলোয়ার হোসেন
মোঃ দেলোয়ার হোসেন

ভৌগোলিক নির্দেশক বা জিআই পণ্যগুলো দেশের সম্পদ। জিআই স্বীকৃতি ও সনদের মাধ্যমে রাষ্ট্র একটি পণ্যের স্বত্ব লাভ করে। দেশের জিআই পণ্য স্বীকৃতি ও সুরক্ষার জন্য শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতায় ‘পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্কস (ডিপিডিটি)’ নামক একটি অধিপ্তর কাজ করছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে উৎপাদিত বিশেষগুণ সম্পন্ন পণ্যগুলোর আবেদন পাওয়ার প্রেক্ষিতে আইন-২০১৩বিধিমালা-২০১৫ অনুযায়ী জিআই স্বীকৃতি ও সনদ দিয়ে থাকে এই অধিপ্তর। ২০১৬ সালের ১৭ই নভেম্বর জামদানিকে স্বীকৃতি দেওয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশের জিআই স্বীকৃতির আনুষ্ঠানিকতা পেয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশের সর্বমোট জিআই পণ্য ২১টি। জার্নালে আছে আরও ১০টি। ২ মাসের মধ্যে কোন বিরোধীতা না আসলে দেশের স্বীকৃত জিআই পণ্যের সংখ্যা ২১ থেকে ৩১টিতে উন্নতি করবে। নিয়মিত বাড়ছে জিআই পণ্য এবং জার্নালের সংখ্যা।

আরও পড়ুন: জিআই পণ্যের প্রশ্ন ও উত্তর

জিআই পণ্য কতটি?

জিআইপণ্যের নামআবেদনকারীআবেদন নংআবেদন তারিখসনদ প্রদান
০১জামদানি শাড়িবিসিক১/২০১৫১০.০৯.২০১৫১১.১১.২০১৬
০২বাংলাদেশ ইলিশমৎস্য অধিদপ্তর২/২০১৬১৩.১১.২০১৬১৭.০৮.২০১৭
০৩চাঁপাই নবাবগঞ্জের খিরসাপাত আমবাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট৩/২০১৭০২.০২.২০১৭২৭.০১,২০১৯
০৪বিজয়পুরের সাদামাটিজেলা প্রশাসন নেত্রকোণা৫/২০১৭০৬.০২.২০১৭১৭.০৬.২০২১
০৫দিনাজপুরের কাটারীভোগবাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট৬/২০১৭০৬.০২.২০১৭১৭.০৬.২০২১
০৬বাংলাদেশ কালিজিরাবাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট৭/২০১৭০৭.০২.২০১৭১৭.০৬.২০২১
০৭রংপুরের শতরঞ্জিবিসিক৩৪/২০১৯১১.০৭.২০১৯১৭.০৬.২০২১
০৮রাজশাহী সিল্কবাংলাদেশ রেশম উন্নয়ন বোর্ড২৭/২০১৭২৪.০৯.২০১৭১৭.০৬.২০২১
০৯ঢাকাই মসলিনতাঁত বোর্ড৩০/২০১৮০২.০১.২০১৮১৭.০৬.২০২১
১০বাংলাদেশের বাগদা চিংড়িমৎস্য অধিদপ্তর৩২/২০১৯০৪.০৭.২০১৯২৪.০৪.২০২২
১১রাজশাহী-চাপাইনবাবগঞ্জের ফজলি আম১. ফল গবেষণা কেন্দ্র, বিনোদপুর
২. চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি এসোসিয়েশন
১৫/২০১৭০৯.০৩.২০১৭২৫.০৪.২০২৩
১২বাংলাদেশের শীতলপাটিবিসিক৩৭/২০২১১৬.০৩.২০২১২০.০৭.২০২১
১৩বগুড়ার দইরেঁস্তোরা মলিক সমিতি, বগুড়া২৯/২০১৮০১.০১.২০১৮২৫.০৬.২০২৩
১৪শেরপুরের তুলশীমালা ধানজেলা প্রশাসন, শেরপুর৩১/২০১৮১১.০৪.২০১৮১২.০৬.২০২৩
১৫চাঁপাইনবাবগঞ্জের ল্যাংড়া আমআঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্র চাঁপাইনবাবগঞ্জ১০/২০১৭১৯.১২.২০১৭২৫.০৬.২০২৩
১৬চাঁপাইনবাবগঞ্জের আশ্বিনা আমআঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্র চাঁপাইনবাবগঞ্জ১১/২০১৭১৯.১২.২০১৭২৫.০৬.২০২৩
১৭নাটোরের কাঁচাগোল্লাজেলা প্রশাসন, নাটোর৪০৩১.০৩.২০২৩০৮.০৮.২০২৩
১৮বাংলাদেশ ব্লাক বেঙ্গল ছাগলপ্রাণি সম্পদ অধিদপ্তর২৮/২০১৭২৫.১০.২০১৭০৯.০১.২০২৪
১৯টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ির চমচমজেলা প্রশাসন, টাংগাইল৪১০৩.০৩.২০২৩০৯.০১.২০২৪
২০কুমিল্লার রসমালাইজেলা প্রশানস, কুমিল্লা৪২১৬.০৪.২০২৩০৯.০১.২০২৪
২১কুষ্টিয়ার তিলের খাজাজেলা প্রশানস, কুষ্টিয়া৪৩১৭.০৪.২০২৩০৯.০১.২০২৪
২২রংপুরের হাঁড়িভাঙ্গা আমআলহাজ্ব আব্দুস সালাম সরকার, হাড়িভাঙ্গা আম কৃষক স্কুল১৫.০২.২০১৭২৫.০৪.২০২৪
২৩মৌলভীবাজারের আগরবাংলাদেশ আগর এন্ড আতর ম্যানুফ্যাকচারার্স এন্ড এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশন১৯১২.০৪.২০১৭২৫.০৪.২০২৪
২৪মৌলভীবাজারের আগর আতরবাংলাদেশ আগর এন্ড আতর ম্যানুফ্যাকচারার্স এন্ড এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশন৩৩১১.০৭.২০১৯২৫.০৪.২০২৪
২৫মুক্তাগাছার মন্ডাউপজেলা প্রশাসন, মুক্তাগাছা, ময়মনসিংহ৪৪০২.০৫.২০২৩২৫.০৪.২০২৪
২৬যশোরের খেজুরের গুড়উপজেলা নির্বাহী অফিসার, চৌগাছা, যশোর৪৫২৩.০৫.২০২৩২৫.০৪.২০২৪
২৭নরসিংদীর অমৃত সাগর কলাজেলা প্রশাসক, নরসিংদী৪৯২৯.০৮.২০২৩২৫.০৪.২০২৪
২৮রাজশাহীর মিষ্টি পানজেলা প্রশাসক, রাজশাহী৫১৩১.০৮.২০২৩২৫.০৪.২০২৪
২৯গোপালগঞ্জের রসগোল্লাজেলা প্রশাসক, গোপালগঞ্জ৪৭২২.০৮.২০২৩২৫.০৪.২০২৪
৩০জামালপুরের নকশিকাঁথাজেলা প্রশাসক, জামালপুর৩৫১৭.০৭.২০১৯২৫.০৪.২০২৪
৩১টাঙ্গাইল শাড়িজেলা প্রশাসক, টাঙ্গাইল৫৭০৬.০২.২০২৪২৫.০৪.২০২৪
৩২নরসিংদীর লটকনজেলা প্রশাসক, নরসিংদী৫০২৯.০৮.২০২৩
সূত্র: পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর

জিআই পণ্যের জার্নাল

পণ্যের নামআবেদনকারীআবেদন নংজার্নাল তারিখ
০১মধুপুরের আনারসজেলা প্রশাসক, টাঙ্গাইল৫২২০.০৬.২০২৪
০২ভোলার মহিষের দুধের কাঁচা দইজেলা প্রশাসক, ভোলা৫৫২০.০৬.২৪
০৩মাগুরার হাজরাপুরী লিচুজেলা প্রশাসক, মাগুরা৪৮৩০.০৬.২০২৪
০৪সিরাজগঞ্জের গামছাচেয়ারম্যান, বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড৬৫৩০.০৬.২০২৪
০৫সিলেটের মণিপুরি শাড়িচেয়ারম্যান, বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড৪৬০২.০৭.২০২৪
০৬মিরপুরের কাতান শাড়িচেয়ারম্যান, বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড৬০১১.০৭.২০২৪
০৭ঢাকাই ফুটি কার্পাস তুলাচেয়ারম্যান, বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড৩৮০১.০৭.২০২৪
০৮শেরপুরের ছানার পায়েসজেলা প্রশাসক, শেরপুর ৫৬২৮.০৭.২০২৪
০৯কুমিল্লার খাদিচেয়ারম্যান, বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড৬১১১.০৭.২০২৪
১০ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছানামুখী মিষ্টিজেলা প্রশাসক, ব্রাহ্মণবাড়িয়া৭৫১১.০৭.২০২৪
১১গোপালগঞ্জের ব্রোঞ্জের গহনাজেলা প্রশাসক, গোপালগঞ্জ৬৭১১.০৭.২০২৪
১২সুন্দরবনের মধুজেলা প্রশাসক, বাগেরহাট২৫১১.০৭.২০২৪
১৩সিরাজগঞ্জের লুঙ্গিচেয়ারম্যান, বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড৬৬০২.০৯.২০২৪
১৪গাজীপুরের কাঁঠালজেলা প্রশাসক, গাজীপুর৭১০১.০৯.২০২৪
১৫কিশোরগঞ্জের রাতা বোরো ধানরজেলা প্রশাসক, কিশোরগঞ্জ৮৫০২.০৯.২০২৪
১৬অষ্টগ্রামের পনিরজেলা প্রশাসক, কিশোরগঞ্জ৮৬০২.০৯.২০২৪
সূত্র: পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর

জিআই পণ্য কী?

একটি বিশেষ স্বীকৃতি নাম ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই)। মাটি, পানি, আবহাওয়া কিংবা কারিগরের বিশেষ দক্ষতার কারণে অনন্য হওয়া পণ্যকে ভৌগোলিক জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন (জিআই) স্বীকৃতি দেওয়া হয়। মূলত কোনো একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের বিশেষ পণ্যকে চিহ্নিত ও পরিচিত করতে ভূমিকা রাখে জিআই স্বীকৃতি। এই স্বীকৃতি আঞ্চলিক পণ্যের স্বতন্ত্র পরিচয় বহন করে তাই নামের উপর গুরুত্ব দিয়ে পণ্যটি কেনার সিদ্ধান্ত নিতে পারে ক্রেতারা।

”কোনো একটি দেশের নির্দিষ্ট ভূখণ্ডের মাটি, পানি, আবহাওয়া ও সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা এবং সেখানকার জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতি যদি কোনো একটি পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, তা হলে সেটিকে সেই দেশের ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।” —— আমাদের সময়

DS 14 13 06 2023

জিআই স্বীকৃতি কেন দরকার?

একটি বিশেষ পণ্য চেনার জন্য জিআই স্বীকৃতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যেন কোনো পণ্যের বিস্তারিত না জানলেও খ্যাতির উপর নির্ভর করে সেই পণ্যটি ব্যবহার করতে পারে ভোক্তারা। এছাড়াও এটি ভৌগোলিক পরিচিতি বৃদ্ধির পাশাপাশি স্থানীয় জনগোষ্ঠীর আর্থিক উন্নয়নে অবদান রাখে। সাধারণত উৎপত্তিস্থলের নামে দেওয়া হয় জিআই স্বীকৃতি। উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা যায়, ঢাকাই জামদানি, রাজশাহী সিল্ক, দিনাজপুর কাটারীভোগ চাল, রংপুরের শতরঞ্জি কিংবা বাংলাদেশের ইলিশ মাছের কথা।

স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে ব্র্যান্ডিং বাড়াতে জিআই স্বীকৃতি গুরুত্ব বহন করে। এছাড়াও রপ্তানিতে বিশেষ অবদান রাখে এই স্বীকৃতি। জিআই সনদ পাওয়ার কারণে বাংলাদেশ ব্যতীত অন্য কোন দেশ সরাসরি ’ইলিশ মাছ’ কিংবা ’জামদানি শাড়ি’ নামে পণ্য রপ্তানি করতে পারবে না। এই দুটি পণ্য পৃথিবীর অন্য কোথাও উৎপাদন হলেও বাংলাদেশের পণ্যগুলোর সাথে শতভাগ বৈশিষ্ট্যে মিলবে না। এ যুক্তির দলিল বহন করে জিআই স্বীকৃতি।

পাশের দেশ ভারতও জামদানি পণ্যের জিআই সনদ পেয়েছে। তবে নামে রয়েছে ভিন্নতা। ভারতের জামদানির নাম ’উপধা জামদানি শাড়ি’ আর বাংলাদেশের ’জামদানি শাড়ি’। ভারতের জিআই পণ্য ’ফজলি আম’ এবং বাংলাদেশের ‘রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জের ফজলি আম’। একই পণ্য উভয় দেশে হলেও বৈশিষ্ট্যে পার্থক্য রয়েছে।

কোন ধরণের পণ্যগুলো জিআই পণ্যের নিবন্ধন পায়?

কৃষি, হস্তশিল্প, খাবার, প্রাকৃতিক উৎস থেকে সংগ্রহীত কিংবা কারিগর দ্বারা তৈরি হওয়া পণ্যগুলো জিআই স্বীকৃতি পাবে। অর্থাৎ যে পণ্য জিআই নিবন্ধন নিয়মের আওতাধীন পড়ে সেগুলো জিআই নিবন্ধন পেতে পারে। ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য (নিবন্ধন ও সুরক্ষা) আইন, ২০১৩-তে বলা হয়েছে যেসব পণ্য বাংলাদেশে প্রচলিত কোনো আইনের পরিপন্থী, নৈতিকতার পরিপন্থী, প্রতারণার আশঙ্কা থাকে, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগার সম্ভাবনা থাকে, আক্ষরিক অর্থে দেশের ভুখণ্ডের হলেও প্রকৃতপক্ষে অন্য কোন ভূখণ্ডের ইত্যাদি পণ্যের জিআই নিবন্ধনে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

355618249 10229364139071523 7084738031517474238 n

মনোনীত হওয়ার শর্তগুলো:

একটি পণ্য কোনো দেশ, ভূখন্ড, অঞ্চল, এলাকা বা জনপদের মাটি, পানি, আবহাওয়া কিংবা কারিগরের বিশেষ দক্ষতায় অনন্য হতে হয়। সেই পণ্যের সুনাম, ঐতিহ্য ইতিহাস থাকতে হয়। দীর্ঘ সময় ধরে ঐ অঞ্চলে উৎপাদন হওয়ার প্রমাণ— গান, গল্প, কবিতা, বই, সংবাদ কিংবা গেজেট অর্থাৎ পুরাতন দলিল থাকতে হয়। কোন অঞ্চলে উৎপাদন হয়? বিশেষ বৈশিষ্ট্য কী? এই পণ্যের উৎপাদনের সাথে কত মানুষ জড়িয়ে আছে? তাদের জীবনযাত্রা ও আর্থিক উন্নয়নে কতটা ভূমিকা রাখছে? বার্ষিক বিক্রির পরিমাণ কত? এই পণ্যটি একই বৈশিষ্ট্য নিয়ে অন্য কোথাও উৎপাদন হয় কি না? জিআই নিবন্ধন পাওয়ার ক্ষেত্রে এসবের সুস্পষ্ট জবাব থাকতে হয়।

কোন প্রতিষ্ঠান জিআই পণ্যের নিবন্ধন দিয়ে থাকে?

বৈশ্বিক সংস্থা ’ওয়ার্ল্ড ইন্টলেকচুয়্যাল প্রপার্টি অর্গানাইজেশন (WIPO)’ জিআই নিবন্ধন দিয়ে থাকে। বাংলাদেশের পক্ষে জিআই নিবন্ধন দেয় শিল্প মন্ত্রণালয়ের ‘পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর (ডিপিডিটি)’। এর জন্য আইন অনুযায়ী ফি, নির্ধারিত ফরম এবং সকল প্রমাণসহ ডিপিডিটি বরাবর আবেদন করতে হয়। তাহলে সকল যাচাই বাছাই শেষ করে আইন মোতাবেক নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ডিপিডিটি।

কারা আবেদন করতে পারে?

পণ্য উৎপাদন, বাজারজাতকরণ, গবেষণা, প্রতিনিধিত্ব কিংবা ব্যবসার উন্নয়নে কাজ করে এমন নিবন্ধিত সমিতি, সংগঠন বা সরকারি প্রতিষ্ঠান (ডিসি অফিস, বিসিক, এসএমই ফাউন্ডেশন, অধিদপ্তর, ইনস্টিটিউট ইত্যাদি) জিআই নিবন্ধনের আবেদন করতে পারে। এখানে উল্লেখ্য যে, জিআই নিবন্ধনের জন্য কোন একক ব্যক্তি আবেদন করতে পারে না এবং জিআই নিবন্ধন কোন ব্যক্তি বা ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয় না। এটি একটি ভৌগোলিক স্বীকৃতি।

আরও পড়ুন: জিআই যোদ্ধা তাঁরা: কী করেন, কীভাবে করেন

জিআই পণ্যের আবেদন পক্রিয়া:

সঠিক ও পরিপূর্ণ তথ্য প্রদানের মাধ্যমে জিআই নিবন্ধন ফরম পূরণ করতে হয়। সেখানে আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানের নাম, পণ্যের নাম, বৈশিষ্ট্য, বিশেষত্ব, উৎপাদন পদ্ধতি, ব্যবহার কাল, পণ্যের ক্যাটাগরি, বৈজ্ঞানিক রিপোর্ট, ঐতিহাসিক দলীল, পণ্যের নমুনা, পণ্যের সাদা ও রঙ্গিন ছবি, বাৎসরিক উৎপাদন রেকর্ড, বিক্রির রেকর্ড, উৎপাদন এলাকার মানচিত্রসহ বিস্তারিত তথ্য সংযুক্ত করে একটি ডকুমেন্টেশন তৈরি করতে হয় এবং ফরম পূরণ করে ডিপিডিটি বরাবর পে অর্ডার স্লিপসহ উপস্থিত হয়ে বা ডাকযুগে আবেদন করতে হয়।  আবেদন পদ্ধতির একটি চেকলিস্ট ডিপিডিটির ওয়েবসাইটে দেওয়া আছে।  সাধারণত আবেদন করার ১ মাসের মধ্যে রিভিউ করে আবেদনকারী প্রতিষ্ঠান বরাবর ফিডব্যাক দিয়ে থাকে ডিপিডিটি। কোনো তথ্য কিংবা ডকুমেন্টের ঘাটতি থাকলে তা প্রদান করতে হয়।

জিআই ফি এর তালিকা:

জিআই পণ্যের কয়েক ধরণের ফি রয়েছে। তা কয়েকধাপে পরিশোধ হয়।

প্রথম ধাপ: পণ্যের শ্রেণির উপর ভিত্তি করে আবেদন ফি নির্ধারিত হয়। যদি একটি পণ্যের একটি শ্রেণি হয় তাহলে ডিপিডিটি বরাবর ১৫ হাজার টাকা ব্যাংক ড্রাফট বা পে অর্ডার করতে হয়। আর পণ্যটি ২টি শ্রেণি হলে আবেদন ফি পরিশোধ করতে হয় ৩০ হাজার টাকা। সাথে ১৫% ভ্যাট প্রদান করতে হয়।

দ্বিতীয় ধাপ: জার্নাল প্রকাশের পর সার্টিফিকেট ইস্যুর জন্য ৩ হাজার টাকা ফি ও ১৫% ভ্যাট দিতে হয়।

তৃতীয় ধাপ: জিআই নিবন্ধন পাওয়ার পর উৎপাদনকারীরা রেজিস্ট্রার ইউজার হওয়ার জন্য একজন উৎপাদনকারী ১ হাজার টাকা ও ১৫% ভ্যাট দিতে নিবন্ধন ও সনদ নিতে হয়।


এছাড়াও আরও কয়েক ধাপে ফি রয়েছে। যেমন: জার্নাল প্রকাশের পর অন্য অঞ্চলের পণ্য হিসেবে দাবি করতে চাইলে কিংবা জিআই সনদের নবায়ন ইত্যাদি। জিআইয়ের সবধরণের ফি সম্পর্কে জানতে ক্লিক করুন

জিআই সনদের মেয়াদ ৫ বছর। মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্বে নবায়ন করতে হয়।

DS 1s 08 04 2023

জিআই জার্নাল কেন?

জিআই পণ্যের জন্য জার্নাল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একটি জিআই আবেদনের সকল যাচাই বাছাই শেষ করে প্রাথমিক অনুমোদনের পর সরকারের বাংলাদেশ সরকারী মুদ্রণালয় থেকে গেজেট বা জার্নাল প্রকাশ করা হয়। এরপর সেই জার্নাল নির্দিষ্ট কিছু স্থানে প্রিন্ট কপি রাখার পাশাপাশি ডিপিডিটির ওয়েবসািইটে প্রকাশ করা হয়। যেন মানুষ সেই পণ্যের জার্নাল সম্পর্কে জানতে এবং কোন বিরোধিতা থাকলে নিয়ম মেনে তা ডিপিডিটি বরাবর করতে পারে। জার্নালকে জিআই এর প্রাথমিক স্বীকৃতিও বলে কেউ কেউ। ২ মাসের মধ্যে কোন পণ্যের জিআই স্বীকৃতি নিয়ে বিরোধীতা না আসলে ডিপিডিটির মহাপরিচালক সেই পণ্যকে জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেন। অর্থাৎ সনদ ইস্যু করেন। এছাড়াও জিআই তালিকাভুক্ত হওয়ার পর রেজিস্ট্রার উৎপাদনকারীদের তালিকা প্রকাশ করা হয় নতুন জার্নালে।

জিআই পণ্যের নিবন্ধন

জিআই পণ্যের নিবন্ধন বাড়লে জেলার লাভ কী?

জিআই নিবন্ধন পাওয়া পণ্যগুলো দেশের কোনো না কোনো ভৌগোলিক এলাকায় উৎপাদন হয়। তাই সাধারণত ঐ অঞ্চলের নামে জিআই নিবন্ধন আবেদন করা হয়। তবে কিছু কিছু আবেদন শুধু পণ্যের নামেও করা হয়। যেমন: জামদানি শাড়ি। 

জেলার নাম সংযুক্ত করে আবেদন করলে পণ্যের সাথে জড়িয়ে যায় জেলা ব্র্যান্ডিং আর জেলার নাম না থাকলেও পণ্যের ব্র্যান্ডিং, চাহিদা, উৎপাদন, আয় সবকিছুর সুবিধা ভোগ করে জেলার উৎপাদনকারীরা। যার ফলে বৃদ্ধি পায় ঐ জেলার অর্থনীতিক ও কর্মসংস্থান।

পণ্যের শ্রেণি বা NICE classification

নিস চুক্তির অধীনে ট্রেডমার্ক ও জিআই নিবন্ধনের জন্য পণ্য ও সেবার আন্তর্জাতিক শ্রেণীভুক্তকরণ পণ্যসমূহ:

  1. শিল্প কারখানা, বিজ্ঞান, আলোকচিত্র, কৃষি, উদ্যানবিদ্যা এবং অরণ্যে ব্যবহৃত রাসায়নিক দ্রব্য; অপ্রক্রিয়াজাত কৃত্রিম রজন, অপ্রক্রিয়াজাত প্লাস্টিক; সার; অগ্নি নির্বাপক উপাদান; পেম্পারিং ও সোলাডারিং প্রিপারেশন, খাদ্যদ্রব্য সংরক্ষণে রাসায়নিক উপাদান; চামড়া পাকা করার উপাদান; শিল্প কারখানায় ব্যবহৃত আঠা।
  2. রঙ, বার্নিশ; জং প্রতিরোধে ও কাঠের ক্ষয় রোধে ব্যবহৃত প্রিজারভেটিভ; কালার‌্যান্টস; মর্ডারেন্টস; অপরিশোধিত প্রাকৃতি রজন; ফয়েলে ব্যবহৃত ধাতু এবং চিত্রশিল্পী, ডেকোরেটর, ছাপাখানা এবং শিল্পীদের ব্যবহৃতহ পাউডার।
  3. দ্রুত আপডেট হবে…

লেখক : প্রতিষ্ঠাতা, আওয়ার শেরপুর।


Spread the love

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top