আমরা জানি, জিআই পণ্য মানেই কোনো একটা পণ্যের সাথে সেটার উৎপাদন অঞ্চল গভীরভাবে সম্পর্কিত। তাই কোনো পণ্য জিআই হওয়া মানে সেই পণ্যটার সাথে সেই উৎপাদন অঞ্চলেরও সুরক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, কারণ অঞ্চলটার বৈশিষ্ট্যের জন্যই সেই পণ্যটা বিশেষ।
আমাদের দেশের বিভিন্ন এলাকার অসংখ্য ঐতিহ্যবাহী এবং জনপ্রিয় পণ্য জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে, যেগুলোর জিআই করা হলে সেই পণ্যের পাশাপাশি এর উৎপাদন অঞ্চলের উপরও বাড়তি নজর দেয়া হত যেন সেই পণ্যটাকে টিকিয়ে রাখা যায়।
যেমনঃ আমাদের গফরগাঁও এর লাফা বেগুন এক সময় সারাদেশে অনেক বেশি জনপ্রিয় ছিল। গফরগাঁও বেগুনের জন্য বিখ্যাত হয়েছিল এই লাফা বেগুনের জন্যই। কিন্তু বর্তমানে এই বেগুন বিলুপ্তই বলা যায়। আমার গ্রামই ছিল এটার প্রধান উৎপাদন অঞ্চল।
যতটুকু তাই খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি, তা হলো-
এই বেগুন যে সব জমিতে চাষ করা হত সেগুলো নদী ভাঙনের ফলে ব্রহ্মপুত্র নদীর তলদেশে বিলীন হয়ে গেছে, এবং
১৯৮৮ সালের বন্যায় লাফা বেগুনের সংরক্ষিত বীজ সব নষ্ট হয়ে যাওয়ায় এটা আর চাষ করা সম্ভব হয় নি।
এই যে ক্ষতিটা হলো, এমন একটা বিখ্যাত পণ্য যা আর দ্বিতীয় কোনো অঞ্চলে চাষ হয় নি সেটা এভাবে বিলুপ্ত হয়ে গেলো এটা হত না যদি এই পণ্যটা জিআই স্বীকৃতি পেতো। কারণ জিআই পণ্য হলে সেই পণ্যটা যেনো টিকে থাকে, এর কোয়ালিটি যেনো ঠিক থাকে এগুলোর প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দেয়া হত। উৎপাদন অঞ্চলের যে সব বৈশিষ্ট্যের কারণে এই পণ্যটা বিশেষত্ব লাভ করেছে সেই বৈশিষ্ট্যগুলোকে ধরে রাখতে সেই অঞ্চলটাকে বাড়তি সুরক্ষা দেয়া হত, সেই পণ্যের বানিজ্যিক সুবিধার্থে অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা, বাজার ব্যবস্থা ইত্যাদি সবকিছুরই উন্নতি হত। পুরো অঞ্চলের মানুষের জীবনব্যবস্থাই বদলে যেতো একটা পণ্যকে ঘিরে। আবহাওয়া বা জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট কোনো প্রাকৃতিক দূর্যোগ যেনো একে প্রভাবিত করতে না পারে, ক্ষতি করতে না পারে সেদিকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হত।
তাই জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবকে প্রশমিত করতে এবং এর সাথে মানিয়ে চলার, টিকে থাকার উপযোগী ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে জিআই পণ্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। জিআই পণ্যের মাধ্যমে কোনো একটা অবহেলিত অঞ্চলের চেহারা রাতারাতি বদলে দেয়া যেতে পারে।